প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৯ অক্টোবর
‘সেফ ড্রাভই সেভ লাইফ ’ কর্মসূচির থিমে দুর্গা পুজোর আয়োজনের পাশাপাশি সর্বত্র চলেছিল সচেতনতা প্রচার।কিন্তু এতসবকিছুর
পরেও পুজোর দিনগুলিতে পূর্ব বর্ধমান জেলায় রোখা গেলনা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা ।
পুজোর পাঁচ দিনে পৃথক পৃথক পথ দুর্ঘটনায়
মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের । জখম হয়েছে ৩৯ জন
তারমধ্যে মহানবমীর রাতথেকে দশমীর রাত পর্যন্ত পৃথক চারটি পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুজনের ।দুর্ঘটনা গুলি ঘটেছে জামালপুর , শক্তিগড় ও মেমারির থানা এলাকায় । জখমদের মধ্যে রয়েছে ৪ জন সিভিক ভল্যান্টিয়ার। তাদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক । পুলিশ দুর্ঘটনা গুলির তদন্ত শুরু করেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে , সোমবার গভীর রাতে টোটোয় চড়ে বড়শুলের দিকে ঠাকুর দেখতে যাচ্ছিলেন মেমারির ষষ্ঠিপল্লীর ৯ জন বাসিন্দা । টোটো আরোহীরা গভীর রাতে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন । পথে শক্তিগড় থানার কাঁঁদোসোনা এলাকায় একটি স্করপিও গাড়ি নিয়ন্ত্রন সামলাতে না পেরে টোটোর পিছন ধাক্কা মারে । তাতে বেসামাল হয়েগিয়ে দুটি গাড়ি সোজা গিয়ে ধাক্কা খায় রাস্তার পাশের গাছে । এই দুর্ঘটনার দিনেই মৃত্যু হয় লক্ষ্মী মিদ্দা (৪৭) নামে এক মহিলার । চিকিৎসাধীন থাকাকালে পরে মৃত্যু হয় প্রীয়া মিদ্দা (১৯)নামে টোটো অপর আরোহীর । ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় টোটো ও স্করপিও গাড়ির ১২ জন আরোহী জখম হন । তাদের কয়েকজনকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাকিদের বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।জখমদের মধ্যে কয়েকজনের আঘাত গুরুরতর বলে জানাগেছে । দুর্ঘটনাগ্রস্থ দুটি গাড়ি পুলিশ আটক করেছে ।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে মঙ্গলবার সকালে জামালপুরের নতুনগ্রামে হওয়া দুর্ঘটনায় গুরুতর জখন হন এক বাইক আরোহী । অচৈতন্য অবস্থায় মেমারি তারকেশ্বর রোডে উপর পড়েছিল শ্রীকান্ত মাঝি (২৬) নামে ওই বাইক আরোহী । পাশেই পড়েছিল তাঁর ভাঙাচোরা বাইকটি । খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ যুবককে উদ্ধার করে ব্লক হাসপাতালে নিয়েযায় । যুবকের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । কিভাবে দুুর্ঘটনা ঘটলো তার তদন্ত পুলিশ শুরু করেছে । পুলিশ সূত্রে জানাগেছে , দুর্ঘটনায় জখম যুবকের বাড়ি হুগলীর ধনিয়াখালি থানার পূর্ব কেশবপুর এলাকায় । ফের এদিনই দুপুরে মেমারি তারকেশ্বর রোডে জামালপুর থানার মণিরামবাটি এলাকায় বাইক দুর্ঘটনা ঘটে । এই দুর্ঘটনায় এক বাইক আরোহীর মৃত্যু হয় । জখম হয় একই বাইকের অপর এক আরোহী । পুলিশ সূত্রে জানাগেছে মৃত ব্যক্তির নাম উদয় মালিক (৫৭)। জখম বছর ৬০ বয়সী ব্যক্তির নাম রঞ্জিত মালিক । তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে । পুলিশ সূত্রে জানাগেছে মৃত ও জখম দুজনেরই বাড়ি জামালপুরের দক্ষিনশুড়া গ্রামে । মৃতর আত্মীয় তাপস মালিক জানিয়েছেন , দুই বন্ধু উদয় ও রঞ্জিত সোমবার তারকেশ্বরে ঠাকুর দেখতে গায়েছিল । মঙ্গলবার দুপুরে বাইকে চড়ে তারা তারকেশ্বর থেকে নিজেদের বাড়ি ফিরছিল । পথে মণিরামবাটি এলাকায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা লরির পেছনে সজোর ধাক্কা মেরে বসে বাইক আরোহীরা । খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌছে রক্তাত অবস্থায় দুই বাইক আরোহীকে উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়েযায় । সেখানে চিকিৎসক উদয় মালিককে মৃত ঘোষনা করেন । আশঙ্কাজনক অবস্থায় রঞ্জিতকে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । পুলিশের প্রাথমিক অনুমান বাইক চালাতে চালাতে চালক ঘুমিয়ে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে । এই দিনই গভীর রাতে বড়সড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২ নম্বর জাতিয় সড়কে মেমারির সরডাঙ্গা এলাকায় । ট্রাফিক সামলানোর ডিইটিরত চার সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে সজোরে ধাক্কা মেরে পালায় একটি চারচাকা গাড়ি । এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছে তিন সিভিক ভল্যান্টিয়ার । তাদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক থাকায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে । একজনের চিকিৎসা চলছে বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে । প্রাথমিক চিকিৎসার পর এক সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে । পুলিশ সূত্রে জানাগেছে , পুজোয় ট্রাফিক ডিউটি সামলানোর জন্য মাধবডিহি থানার চার সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে পাঠান হয়েছিল মেমারি থানায় । মঙ্গলবার গভীর রাতে তারা
২ নম্বর জাতীয় সড়কে মেমারির সরডাঙ্গা এলাকায় ডিউটি করছিল । তখনই তারা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে । সিসিটিভি ফুটিজে খতিয়েদেখে পুলিশ কর্তারা জানতে পেরেছেন দ্রুত গতীতে চলা একটি গাড়ি চার সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে ধাক্কা মেরে পালায় । বরাত জোরে প্রাণে বাঁচলেও এই দুর্ঘটনায় চার সিভিক ভল্যান্টিয়ার জখম হয় । ঘাতক গাড়ির খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ ।
পুজোর মধ্যে শুধুমাত্র যে নবমী ও দশমীর দিন হওয়া দুর্ঘটনায় কারোর মৃত্যু হয়েছে এমনটা নয় । মহাপঞ্চমীর দিন পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট ও মন্তেশ্বরে হওয়া পৃথক পথ দুর্ঘটনা ৩ জনের মৃত্যু হয় । জখম হন আরো ১১ জন । এরপর মহাসপ্তমীর দিন দুপুরে রেষারেষি করে দ্রুতগতীতে যাবার সময়ে রায়না থানার বাঁকুড়া মোড়ের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে গিয়ে উল্টেপড়ে যাত্রীবাহী বাস । এই দুর্ঘটনায় আহত হন বাসের ৭ যাত্রী । দুর্ঘটনা ঘটে মহাষ্টমীর দিন রাতেও । ওইদিন রাতে হওয়া পৃথক দুটি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক বাইক আরহী যুবকের । জখম হন দুই বাইকের আরো তিন আরোহী ।
জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় যদিও জানিয়েছেন ,পুজোর সময়ে বেপরোয়া যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তরফে কোন খামতি রাখা হয়নি । ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পথে নেমে পুলিশ একটি বাইকে ৩ জন চেপে ঘোরা , মদ্যপ অবস্থায় ও বিনা হেলমেটে বাইক বাইক চালান সহ ট্রাফিক রুল ভঙ্গের ঘটনায় ৫৯০ জনকে ফাইন করেছে । ফাইন বাবদ আদায় হয়েকে ১,৬৩,১০০ টাকা । জেলার সর্বত্র ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কর্মীকেও মোতায়েন রাখা হয়েছিল । তার পরেও এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের কর্তারা বলছেন, পুলিশ সচেতন করলেও জনগন সচেতন হতে না চাওয়াতেই দুর্ঘটনায় লাগাম টানা দুঃসাধ্য হয়েউঠেছে ।
No comments
Post a Comment