দক্ষিণবঙ্গ

‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ নিয়ে হাজারো প্রচারের মধ্যেও পুজোর পঞ্চমী থেকে দশমীর রাত পর্যন্ত দুর্ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানে মৃত ৬ - জখম ৪ সিভিক ভল্যান্টিয়ার সহ ৩৯ জন

Wednesday, October 9, 2019

/ by krishaksetu Bangla


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান  ৯  অক্টোবর 

 ‘সেফ ড্রাভই সেভ  লাইফ ’ কর্মসূচির থিমে  দুর্গা পুজোর আয়োজনের পাশাপাশি সর্বত্র চলেছিল সচেতনতা প্রচার।কিন্তু এতসবকিছুর 
পরেও পুজোর দিনগুলিতে পূর্ব বর্ধমান জেলায় রোখা গেলনা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা । 
পুজোর পাঁচ দিনে পৃথক পৃথক পথ দুর্ঘটনায়   
মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের । জখম হয়েছে ৩৯ জন
তারমধ্যে মহানবমীর রাতথেকে দশমীর  রাত পর্যন্ত  পৃথক চারটি  পথ দুর্ঘটনায়  মৃত্যু হয় দুজনের ।দুর্ঘটনা গুলি ঘটেছে জামালপুর , শক্তিগড় ও মেমারির থানা এলাকায় । জখমদের মধ্যে রয়েছে   ৪ জন সিভিক ভল্যান্টিয়ার।  তাদের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক । পুলিশ দুর্ঘটনা  গুলির  তদন্ত শুরু করেছে ।


 পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে , সোমবার গভীর রাতে টোটোয় চড়ে  বড়শুলের দিকে ঠাকুর দেখতে যাচ্ছিলেন মেমারির ষষ্ঠিপল্লীর ৯ জন বাসিন্দা । টোটো আরোহীরা গভীর রাতে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে  যাচ্ছিলেন ।  পথে শক্তিগড় থানার কাঁঁদোসোনা  এলাকায় একটি স্করপিও গাড়ি নিয়ন্ত্রন সামলাতে না পেরে টোটোর  পিছন  ধাক্কা  মারে । তাতে বেসামাল  হয়েগিয়ে দুটি গাড়ি সোজা গিয়ে ধাক্কা খায় রাস্তার পাশের গাছে ।  এই দুর্ঘটনার দিনেই মৃত্যু হয়  লক্ষ্মী মিদ্দা (৪৭)  নামে এক মহিলার ।  চিকিৎসাধীন থাকাকালে পরে মৃত্যু হয় প্রীয়া মিদ্দা (১৯)নামে  টোটো অপর  আরোহীর ।  ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় টোটো ও স্করপিও গাড়ির  ১২ জন  আরোহী  জখম হন  । তাদের কয়েকজনকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাকিদের  বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি  হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।জখমদের মধ্যে কয়েকজনের  আঘাত গুরুরতর বলে জানাগেছে ।  দুর্ঘটনাগ্রস্থ দুটি গাড়ি পুলিশ  আটক করেছে ।



এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে  মঙ্গলবার সকালে জামালপুরের নতুনগ্রামে হওয়া দুর্ঘটনায় গুরুতর জখন হন এক বাইক আরোহী । অচৈতন্য অবস্থায়  মেমারি তারকেশ্বর রোডে  উপর পড়েছিল শ্রীকান্ত মাঝি (২৬) নামে ওই  বাইক আরোহী ।  পাশেই পড়েছিল তাঁর ভাঙাচোরা বাইকটি ।  খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ যুবককে উদ্ধার করে  ব্লক হাসপাতালে নিয়েযায়  । যুবকের  শারীরিক অবস্থা  খারাপ থাকায় তাকে স্থানান্তর করা হয়  বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ।  কিভাবে দুুর্ঘটনা ঘটলো তার তদন্ত পুলিশ শুরু  করেছে  । পুলিশ সূত্রে জানাগেছে , দুর্ঘটনায় জখম যুবকের বাড়ি হুগলীর ধনিয়াখালি থানার পূর্ব কেশবপুর এলাকায় । ফের এদিনই দুপুরে  মেমারি তারকেশ্বর  রোডে  জামালপুর থানার  মণিরামবাটি  এলাকায় বাইক   দুর্ঘটনা ঘটে ।  এই দুর্ঘটনায় এক বাইক আরোহীর মৃত্যু হয় ।  জখম হয় একই বাইকের অপর এক আরোহী  ।  পুলিশ সূত্রে জানাগেছে মৃত ব্যক্তির নাম উদয় মালিক (৫৭)। জখম  বছর ৬০ বয়সী ব্যক্তির নাম রঞ্জিত মালিক  ।  তাঁকে  বর্ধমান মেডিকেল  কলেজ ও হাসপাতালে  স্থানান্তর করা হয়েছে ।  পুলিশ সূত্রে জানাগেছে  মৃত ও জখম দুজনেরই বাড়ি  জামালপুরের  দক্ষিনশুড়া গ্রামে ।  মৃতর আত্মীয়  তাপস মালিক  জানিয়েছেন , দুই বন্ধু উদয় ও রঞ্জিত  সোমবার তারকেশ্বরে ঠাকুর দেখতে গায়েছিল  । মঙ্গলবার  দুপুরে বাইকে চড়ে তারা তারকেশ্বর থেকে  নিজেদের  বাড়ি ফিরছিল  । পথে মণিরামবাটি এলাকায়  রাস্তার ধারে  দাঁড়িয়ে থাকা  লরির পেছনে  সজোর ধাক্কা মেরে বসে বাইক আরোহীরা ।  খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে পৌছে  রক্তাত অবস্থায় দুই বাইক আরোহীকে উদ্ধার করে  জামালপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়েযায়  ।  সেখানে চিকিৎসক উদয় মালিককে মৃত ঘোষনা করেন । আশঙ্কাজনক অবস্থায় রঞ্জিতকে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান  মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে । পুলিশের প্রাথমিক অনুমান বাইক চালাতে চালাতে চালক ঘুমিয়ে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে । এই দিনই গভীর রাতে বড়সড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২ নম্বর জাতিয় সড়কে  মেমারির সরডাঙ্গা এলাকায় ।  ট্রাফিক সামলানোর ডিইটিরত  চার সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে  সজোরে ধাক্কা  মেরে পালায় একটি চারচাকা গাড়ি । এই ঘটনায়  গুরুতর  জখম হয়েছে  তিন সিভিক ভল্যান্টিয়ার ।  তাদের মধ্যে দুজনের  শারীরিক অবস্থা সংকটজনক থাকায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে  স্থানান্তর করা হয়েছে । একজনের চিকিৎসা চলছে বর্ধমানের অনাময় সুপার স্পেশালিটি  হাসপাতালে ।  প্রাথমিক চিকিৎসার পর এক সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ।  পুলিশ সূত্রে জানাগেছে  ,  পুজোয় ট্রাফিক ডিউটি  সামলানোর জন্য মাধবডিহি থানার চার সিভিক  ভল্যান্টিয়ারকে পাঠান হয়েছিল  মেমারি থানায় ।  মঙ্গলবার  গভীর রাতে  তারা
২ নম্বর জাতীয় সড়কে মেমারির  সরডাঙ্গা এলাকায় ডিউটি করছিল ।  তখনই তারা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ।  সিসিটিভি ফুটিজে খতিয়েদেখে পুলিশ কর্তারা জানতে পেরেছেন দ্রুত গতীতে চলা  একটি  গাড়ি  চার সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে  ধাক্কা মেরে পালায় ।  বরাত জোরে প্রাণে বাঁচলেও  এই দুর্ঘটনায় চার সিভিক ভল্যান্টিয়ার  জখম হয় । ঘাতক গাড়ির খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ ।


 পুজোর মধ্যে শুধুমাত্র যে  নবমী ও দশমীর দিন  হওয়া দুর্ঘটনায় কারোর মৃত্যু হয়েছে  এমনটা নয় । মহাপঞ্চমীর দিন  পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট ও মন্তেশ্বরে হওয়া পৃথক পথ দুর্ঘটনা ৩ জনের মৃত্যু হয় ।  জখম হন আরো  ১১ জন ।  এরপর  মহাসপ্তমীর দিন  দুপুরে রেষারেষি করে দ্রুতগতীতে যাবার সময়ে রায়না থানার বাঁকুড়া মোড়ের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে গিয়ে উল্টেপড়ে যাত্রীবাহী বাস  । এই দুর্ঘটনায় আহত হন বাসের ৭ যাত্রী ।  দুর্ঘটনা  ঘটে মহাষ্টমীর দিন রাতেও ।  ওইদিন রাতে  হওয়া পৃথক  দুটি মোটরবাইক দুর্ঘটনায়  মৃত্যু হয় এক বাইক আরহী যুবকের  । জখম হন দুই বাইকের আরো তিন আরোহী ।


জেলা পুলিশ সুপার  ভাস্কর মুখোপাধ্যায়  যদিও জানিয়েছেন ,পুজোর সময়ে বেপরোয়া যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে  পুলিশের তরফে কোন খামতি রাখা হয়নি । ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে  ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পথে নেমে পুলিশ একটি বাইকে  ৩ জন চেপে ঘোরা , মদ্যপ অবস্থায় ও বিনা হেলমেটে  বাইক  বাইক চালান সহ ট্রাফিক রুল ভঙ্গের ঘটনায়   ৫৯০ জনকে ফাইন করেছে । ফাইন বাবদ আদায় হয়েকে ১,৬৩,১০০ টাকা । জেলার সর্বত্র ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কর্মীকেও মোতায়েন রাখা হয়েছিল । তার পরেও এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের কর্তারা বলছেন, পুলিশ সচেতন করলেও  জনগন সচেতন হতে না চাওয়াতেই  দুর্ঘটনায় লাগাম টানা দুঃসাধ্য  হয়েউঠেছে ।

No comments

Post a Comment

loading...
Don't Miss
© all rights reserved
By SDK IT SOLUTION