শুক্রবার ভোরে সারা দেশে খবর ছড়িয়ে পড়ে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে তেলেঙ্গানা গণধর্ষণে ৪ অভিযুক্তের। দেশ জুড়ে শুরু হয় উল্লাস ও উন্মাদনা। ‘দোষীরা শাস্তি পেয়েছে’- এই কথাই বারবার ঘুরতে থাকে লোকমুখে।
সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ থেকে শহরের রাজপথ, কোণায় কোণায় পুলিশ কমিশনার ভিসি সজ্জনারকে নিয়ে দেশবাসীর আবেগ চোখে পড়ার মত।
ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। শুক্রবার রাত ১১.৪০ মিনিট। দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে লড়াই থামালেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা তরুণী।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রাত ১১.১০ মিনিটে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে।
বৃহস্পতিবার ভোরে ৯০ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় লখনউয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই তরুণীকে।
তারপর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে শুরু করে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসা হয় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে।
সেখানেই ডাক্তার শালাব কুমারের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। বিশেষ একটি আইসিইউ তৈরি করা হয়েছিল তাঁর জন্য।
সফদরজং হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শালাব কুমার জানিয়েছেন, তরুণীর ক্ষত দ্রুত বাড়ছিল। শুরু থেকেই তাঁর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। শত চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না।
তবে এত তাড়াতাড়ি নিজের জীবন থামিয়ে দিতে চাননি ওই নির্যাতিতা।
মৃত উন্নাও নির্যাতিতা চেয়েছিলেন মৃত্যুর আগে দেখে যেতে ধর্ষকরা ফাঁসিতে ঝুলছে। কিন্তু তা আর হল কোথায়? তবে তেলেঙ্গানা গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের খবর হয়তো তাঁর ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছিল।
২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে এই তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল দুই যুবকের বিরুদ্ধে। কিন্তু অভিযুক্ত এলাকায় প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায়, তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বারণ করেছিলেন সকলে।
অন্যদিকে সুবিচারের আশায় নির্যাতিতাও ছিলেন নাছোড়।
বছর দুয়েক আগে নাবালিকা মেয়েটিকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপির কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারিণীর দাবি, ২০১৭ সালে একটি চাকরির জন্য স্থানীয় এক মহিলার সঙ্গে উন্নাওয়ে ওই বিধায়কের বাড়িতে গেলে ধর্ষিত হন তিনি। তখন তাঁর বয়স মাত্রই ১৬।
পরিবারের অভিযোগ, তার পরে বহুবার সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে।
পরিবারের অভিযোগ, তার পরে বহুবার সেঙ্গারের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ তা নিতে অস্বীকার করে।
শেষমেশ অভিযোগ নিলেও, অগ্রগতি হয়নি তদন্তের। ফের অভিযোগ করতে গেলে, উল্টে কুলদীপ সেঙ্গারের দায়ের করা মিথ্যে এফআইআরের ভিত্তিতে তরুণীর বাবাকে গ্রেফতার করা হয় বলে অভিযোগ।
এখানেই শেষ নয়। চলতি বছরের জুলাই মাসে পরিবার ও আইনজীবীর সঙ্গে গাড়িতে রায়বরেলি যাচ্ছিলেন নির্যাতিতা। সেই সময় উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা মারে।
ঘটনায় মারা যান নির্যাতিতার মা ও কাকিমা। গুরুতর জখম অবস্থায় ভেন্টিলেশনে রাখা হয় নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবীকে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছিল, গাড়ির মালিক দেবেন্দ্র কিশোর ধার করে ওই গাড়িটি কিনেছিল।
ধার শোধ করতে না পারায় তাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল।
গাড়ি কোম্পানির এজেন্টরা যাতে গাড়িটির হদিশ না পায়, সেজন্য নম্বর প্লেটে কালি লেপে দেওয়া হয়েছিল।
গাড়ি কোম্পানির এজেন্টরা যাতে গাড়িটির হদিশ না পায়, সেজন্য নম্বর প্লেটে কালি লেপে দেওয়া হয়েছিল।
অবশেষে শেষ তাঁর লড়াই। মৃত উন্নাও নির্যাতিতা । তাঁর মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই ফের সুবিচারের দাবিতে সরব দেশ। এই মৃত্যু আবারও নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে গেল।
প্রশ্ন, আদৌ কি কোনওদিন বিচার পাবেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা?নাকি এমন করেই নীরবে নিভৃতে বিচারের বাণীর কান্না ঝড় তুলবে দেশবাসীর হদয়ে?
No comments
Post a Comment