প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান
পথ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসচেতনতা জগাতে রাজ্য
সরকারের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি । কিন্তু হাজারো সচেতনা প্রচার সত্ত্বেও রোখা যাচ্ছে না দুর্ঘটনায় প্রাণহাণির ঘটনা । এই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছিল একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত পূর্ব বর্ধমানের মেমারির ছাত্রী দিগন্তিকা বোস কে। পথ দুর্ঘটনা রোখাযায় এমন কিছু একটা উদ্ভাবন করার তাগিদ থেকে সে কাজ শুরু করে । শেষমেস দিগন্তিকা আবিস্কার করেফেলেছে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবার বিশেষ যন্ত্র। যা পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় আউটস্ট্যান্ডিং ‘থ্রি’ তে স্থান করেনিয়েছে । দিগন্তিকার দাবি তাঁর আবিস্কৃত যন্ত্র ব্যবহারে দুর্ঘটনা থেকে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে তেমনি কমবে বায়ু দূষণ । দিগন্তিকার আবিস্কৃত এই যন্ত্র ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে সাড়া ফেলেদিয়েছে ।
কি সেই যন্ত্র যাদিয়ে দুর্ঘটনা রোখাযাবে?এবিষয়ে দিগন্তিকা জানিয়েছে, “টেকনোলজি ও মানুষের ইমসন কে কাজে লাগিয়ে সে উদ্ভাবন করেছে এই বিশেষ যন্ত্র । যা কোন বাইক বা কারে ব্যবহার করলে গাড়ি চালানোর সময়ে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে ।একই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ইমসনাল স্পিচের মাধ্যমেও চালককে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে । এছাড়াও বিশেষ হুইসপারিং শব্দের সাহায্যে চালকের শরীরের এড্রিনালিন হরমোন ক্ষরন তরান্বিত করে এক্সিডেন্টের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে চালককে । ” দিগন্তিকা জানিয়েছে, মাত্র ৫০০ টাকা খরচে সে এই অভিনব যন্ত্র তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। যে যন্ত্র শুধু দুর্ঘটনা রুখতে সহায়ক ভূমিকা নেবে তাই নয় । বায়ু দূষণও কমাবে।”
দিগন্তিকার বাবা সুদীপ্ত বোস বলেন , তার মেয়ের আবিস্কৃত যন্ত্রের পোষাকি নাম ‘টেকনোলজি উইথ ইমোশন বেসড অ্যান্টি কলিসন ডিভাইস ফর ভেহিকেইলস ’। তিনি বলেন ,‘কার্যকারিতা পরীক্ষায় সফল হবার পর দিগন্তিকার আবিস্কৃত যন্ত্র পেটেন্টটের ব্যবস্থাও হয়েছে । মিনিস্ট্রী অফ কমার্স স্টার্টঅাপ প্রোজেক্টের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দিগন্তিকার আবিস্কৃত যন্ত্র । সুদীপ্ত বাবু আরো বলেন,‘ এই যন্ত্র আবিস্কারের জন্য দিগন্তিকাকে রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস এবং লক্ষ্মীরতন শুক্লা পুরস্কৃত করেছেন । ছাত্রীর এই কৃতিত্ব স্বরুপ দিগন্তিকার স্কুল কে ৫০ হাজার টাকা অনুদানও দিয়েছে রাজ্য সরকার । নতুন এই আবিস্কৃত যন্ত্র আগামী ১৪ জানুয়ারি পুনরায় কলকাতায় প্রদর্শণের জন্য দিগন্তিকা কন্দ্রীয় সরকারী সংস্থা বিরলা ইনডাস্ট্রিয়াল এ্যন্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের তরফে আমন্ত্রণ পেয়েছে । এছাড়াও এই যন্ত্র আবিস্কার সংক্রান্ত গবেষনা পত্র আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের সেমিনারে পাঠের জন্য ডিএসটি গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়ার তরফে দিগন্তিকা আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে সুদীপ্ত বাবু জানিয়েছেন । ’
মেমারি পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতানপুর এলাকায় দিগন্তিকাদের বাড়ি । রাজ্যের কন্যাশ্রী মডেল দিগন্তিকা মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের (শাখা ২) একাদশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী । মা শুভ্রা বোস সাধারণ গৃহবধূ । বাবা সুদীপ্ত বোসের ইলেকট্রনিক্সের দোকান রয়েছে । বাবার প্রেরনাতেই বিজ্ঞানে নানা অভিনব যন্ত্রপাতি আবিস্কারের কৃতিত্ব দেখিয়ে চলেছে দিগন্তিকা ।
কৃতী ছাত্রী দিগন্তিকা এবারই প্রথম বিশেষ যন্ত্র আবিস্কারের কৃতিত্ব দেখালো এমনটা নয় । ইতিপূর্বে দিগন্তিকা ডাষ্ট কালেক্টিং অ্যাটাচমেন্ট ড্রিল মেশিন আবিস্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল । গত ২১ সেপ্টেম্বর তাঁর আবিস্কৃত ওই যন্ত্রের গবেষণা পত্র আন্তর্জাতিক জার্নালেও প্রকাশিত হয়েছে ।এছাড়াও সন্দরবনে মধু সংগ্রহে যাওয়া মৌলদের বাঘের আক্রমনের হাত থেকে বাঁচার জন্য এক ধরনের চশমা আবিস্কার করেছিল দিগন্তিকা । যে চশমা ব্যবহার করে মৌলরা মাথা বা ঘাড় না ঘুরিয়ে পিছনের বাঘকে দেখে আত্মরক্ষার পথ খুঁজে নিতে পারছে । এছাড়াও স্পন্ডিলাইটিস রোগীদের জন্য বারনৌলির সূত্র কাজে লাগিয়ে ’স্মার্ট সার্ভিক্যাল কলার’ আবিস্কার করেছে মেমারির এই ছাত্রী । দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও পুরস্কৃত করেছেন প্রতিভাময়ী এই ছাত্রীকে । মেমারি বিদ্যাসগর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের (শাখা ২) প্রধান শিক্ষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সহ শিক্ষ পীযুষ বোস জানান , তাঁদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী দিগন্তিকা সারা দেশে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছে ।
No comments
Post a Comment