এনআরসি ও সিএএ নিয়ে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে গোটা দেশ । তানিয়ে সাধারন মানুষের আতঙ্কেরও অন্ত নেই । সেই আতঙ্কে অসুস্থ হয়েপড়ে মৃত্যুর ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে পূর্ব বর্ধমানে । শুক্রবার কাটোয়ায় দুই প্রৌঢ়ের মৃত্যুর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে ফের আউশগ্রামে মৃত্যু হল আরো এক প্রৌঢ়ের। মৃতর নাম গিয়াসউদ্দিন মিঞা (৭২)।তিনি আউশগ্রাম ১ ব্লকের গুসকরা ২ পঞ্চায়েতের শিবদা গ্রামের বাসিন্দা। পরিবার সদস্যরা দাবি করেছেন, বিগত কয়েকদিন যাবৎ এনআরসি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলেন প্রৌঢ় গিয়াসউদ্দিন । সেই অতঙ্কে শুক্রবার রাতে তিনি নিজের বাড়িতেই গুরুতর ভাবে অসুস্থ হয়েপড়েন । রাতেই তাকে নিয়েযাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় । । এই ঘটনায় শিবদার মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে ।
মৃতর ছোট ছেলে হজরত মিঞা জানিয়েছেন,তাঁর বাবার ভোটার কার্ডে নাম ভুল ছিল । এনআরসি ও সিএএ নিয়ে সারা দেশ অগ্নিগর্ভ হয়েওঠার পরথেকে তাঁর বৃদ্ধ বাবা মনেকরতে শুরু করেন ভোটার কার্ডে নাম ঠিক না থাকলে তাঁকে দেশ ছাড়া হতে হবে । এরপর থেকেই ভোটার কার্ডে নামের ভুল ঠিক করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন গিয়াসউদ্দিন মিঞা । নামের ভুল ঠিক করেদেবার জন্য তিনি পঞ্চায়েত এলাকার বিএলওর কাছে দরবার করেন ।হজরত মিঞা বলেন , এনআরসি ও সিএএ নিয়ে কয়েকদিন ধরে দেশের নানা প্রান্তে ঘটেচলা গোলযোগ আশান্তির ঘটনা সংক্রান্ত খবর টেলিভিসনে দেখার পর থেকেই তাঁর বাবা চরম আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন ।
শুক্রবার দিল্লীর ঘটনা সংক্রান্ত খবর রাতে টিভিতে দেখার পরথেকেই তাঁর বাবার দেশছাড়া হবাবার আতঙ্ক আরো বেড়েযায় । তার জেরে অসুস্থ হয়েপড়ায় রাতেই তিনি অসুস্থ হয়েপড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন । মৃতার দুই মেয়ে শরিফা বিবি ও রুপালি বেগম বলেন , ‘এনআরসি এনআরসি করেই আতঙ্কে আমার বাবা মারাগেল । শরিফা বিবি বলেন , মোদি সরকার অবিলম্বে এনআরসি ও সিএএ সংক্রান্ত সমস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করুক । তা নাহলে হয়তো একই আতঙ্কে আগামীদিনে আমার মা কিংবা আমার স্বামীর প্রাণ যাবে ।’ আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও চিত্তজিৎ বসু বলেন ,“ঘটনার কথা জেনেছি । দুঃখজনক ঘটনা । ঘটনা সংক্রান্ত সবিস্তার খোঁজ কবর নেওয়া হচ্ছে ।এলাকাবাসী যাতে অহেতুক আতঙ্কিত না হন সেই বার্তা বিডিও দিয়েছেন । ”
প্রসঙ্গত এনআরসি আতঙ্কে মৃত্যুর ঘটনা এই জেলার গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ঘটতে শুরু করেছে।এনআরসির জন্য প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র জোগাড় করতে না পারায় আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর
মারাযান জামালপুরের টেঙ্গাবেড়িয়া নিবাসী কমল ঘোষ (৫৫)। এরপর একই আতঙ্কে আত্মঘাতী হন জামালপুরের জৌগ্রামের তেলে গ্রামনিবাসী বধূ শিপ্রা শিকদার (৩৬)।
একমাত্র ছেলের ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড ও জন্ম সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারেননি এই বধূ । এনআরসি চালু হলে ছেলেকে দেশ ছাড়া হতে হবে এই আতঙ্কে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে বধূ আত্মঘাতী হন বলে পরিবার সদস্যরা দাবি করেন । এইসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে একই আতঙ্কে শুক্রবার ভোর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারাযান কাটোয়ার নতুনগ্রাম নিবাসী দুই প্রৌঢ় আব্দুস সাত্তার সেখ (৬০) ও আবুল কাশেম সেখ (৫৫)। এনআরসি আতঙ্কে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা জেলার বাসিন্দারের আরোবেশী আতঙ্কিত করে তুলেছে । রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন , “এই রাজ্যে এনআরসি চালু করতে দেওয়া হবেনা বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন । আতঙ্কিত না হবে সবাই মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখুন । ”
No comments
Post a Comment