প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ,বর্ধমান
দিন দুঃখিনী হিন্দু মহিলা সরস্বতী দাসের মৃতদেহ সৎকারের সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলেনিয়েছিল দুই মুসলিম যুবক। শনিবার সেই হিন্দু মহিলার পরলৌকিক কৃয়াকর্ম সম্পাদনের দায়িত্বও আজিজুর রহমান ও লালন সেখ যথাযথ ভাবে পালন করলেন । এই মহতি কাজে দুই যুবক পাশে পান তাঁদের পাতানো দিদি রুবি ঘোষকে । এদিন দুই মুসলিম যুবকের এমন নজিরবিহীন মানবিক কর্মকাণ্ডের স্বাক্ষী থাকলেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির গলিগ্রামের সর্ব্বধর্ম সম্প্রদায়ের আপামোর বাসিন্দা ।
গলসির গলিগ্রামের অত্যন্ত দিন দরিদ্র পরিবারের বধূ ছিলেন সরস্বতী দাস । তাঁর প্রৌঢ় স্বামী ভৈরব দাস একসয়ে ঢেঁড়া পিটিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রচারের কাজ করতেন। বেশ কয়েক বছর আগে তাঁর সেই কাজ চলেযায় । এরপর থেকে ভৈরব বাবু কখনও মাঠের ঘাসকেটে বিক্রী করতেন।আবার কখনো ভিক্ষা করতেন । এই ভাবে সারাদিনে যে ২০-৩০ টাকা রোজগার হত তা দিয়েই ভৈরব বাবু ও সরস্বতীদেবীর দিন গুজরান হত । গত ছয় মাস আগে মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন সরস্বতী দেবী । চিকিৎসা করাতে নাপেরে বাড়িতে শুয়ে যন্ত্রনায় আর্ত চিৎকার করে কাঁদতেন সরস্বতী দেবী । এই বিষয়টি জানতে পেরে গ্রামেরই দুই মুসলিম যুবক আজিজুর ও লালন নিজেদের সাধ্যমতো সরস্বতীদেবীর চিকিৎসা ও অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেন।২৫ শে ডিসেম্বর সরস্বতীদেবী মারা যাবার পর তাঁর সৎকার্য সারার মতো আর্থিক সামর্থও পরিবারের ছিলনা ।
ওই দিনও হিন্দু মহিলার পরিবারের পাশে দাঁড়ান আজিজুর ও লালন। হিন্দু মহিলার মৃতদেহ নিজেদের কাঁধে তুলে শ্বশানে নিয়েগিয়ে তাঁরা দুজনে সৎকার্য সম্পন্ন করান । এদিন হিন্দু রীতি মেনে হওয়া সরস্বতীদেবীর পরলৌকিক কাজের যাবতীয় দায়িত্ব ও ব্যায়ভার আজিজুর ও লালন নিজেদের কাঁধে তুলে নেয় । শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সহ মৃতার দেড় শতাধীক আত্মীয় পরিজনকে খায়ানো তাাঁরা দুজনে দায়িত্ব নিয়ে করালেন । মৃতার স্বামী ভৈরব দাস জানিয়েছেন , আজিজুর , লালন এবং তাঁদের পাতানো দিদি রুবি ঘোষ মিলে সমস্ত খরচ জুগিয়েছেন । শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আসা সবাইকে তারা লুচি, মিষ্টি, ঘুগনী, সব্জি , চাটনি, পাপড় খাইয়েছে । ভৈরব বাবু বলেন দেবতুল এই দুই মুসলিম যুবকের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে । ওরা দুজন আবারও প্রমান করেদিল মানবতাই সবথেকে বড় ধর্ম ।
আরো পড়ুন - হিন্দু মহিলার মৃতদেহ কাঁধে তুলে শ্মশানে নিয়েগিয়ে সৎকার কার্য সারলেন, দুই মুসলিম যুবক
আজিজুর ও লালন এদিন বলেন ,আমরা এক অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে । কারণ ধর্ম যার যাই হোক মানবিকতাই সব থেকে বড় ধর্ম । রুবি ঘোষ বলেন ,আজিজের ও লালন ভাইয়ের সঙ্গে এই মহতি কাজে অংশ নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনেকরছি । এদিন সকালেই কলকাতার বাড়িথেকে গলসির চলে এসে সরস্বতীদেবীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কাজে রুবি ঘোহ হাত লাগান । আজিজুর জানিয়েছে , নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেদিয়ে তাঁর রুবি দিদি জন্মদিন অনুষ্ঠান খরচ বাবাদ ধরা সমস্ত টাকা সরস্বতীদেবীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে খরচ করেদিয়েছেন । গলসির গলিগ্রামের বাসিন্দারা বলেন , সরস্বতীদেবীকে অাঁকড়ে সত্যি এই বাংলায় সম্প্রতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল । ছবি শ্রাদ্ধানেষ্ঠানে আসা অতিথিদের খাওয়াচ্ছে আজিজুর ও লালন ।
No comments
Post a Comment