ধর্ম যার যাই হোক ।সবথেকে বড়কথা মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনেরই জন্য।প্রভু যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিবসের দিনে সেই বাস্তবেরই স্বাক্ষী থাকলেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির গলিগ্রামের বাসিন্দারা ।আর্থিক সামর্থ না থাকায় এদিন এলাকার এক হিন্দু মহিলার মৃতদেহ সৎকারে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিল পরিবার । এই কথা কানে যেতেই ত্রাতা রুপে এগিয়ে আসেন গ্রামের দুই মুসলিম যুবক আজিজুর রহমান ও লালন সেখ। হিন্দু রীতি রেওয়াজকে মান্যতা দিয়ে তাঁরাই সরস্বতী দাসের মৃতদেহ নিজেদের কাঁধে তুলে শ্মশানে গেলেন । সৎকারের সমস্ত খরচ বহন করার পাশাপাশি এই দুই মুসলিম সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে সরস্বতীদেবীর মৃতদেহ দাহকার্য সম্পূর্ণ করালেন । দুই মুসলিম যুবকের এই মহানুভবতার প্রশংসা করেছেন আপামোর গলসিবাসী ।
গলসির গলিগ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারের বধূ ছিলেন সরস্বতীদেবী। তাঁর প্রৌঢ় স্বামী ভৈরব দাস একসময়ে পঞ্চায়েতের হয়ে ঢেঁড়া পেটানোর কাজ করতেন । সেই কাজ অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়েযায়। এরপর থেকে কোনদিন তিন মাঠে ঘাষ কেটে বিক্রি করেন । আরার কখনো ভিক্ষা করেন । এই ভাবে সারাদিনে যে দশ কুড়ি টাকা উপার্জন হয় তাদিয়েই ওই দম্পতির দিনগুজরান হত । মাসছয় আগে মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন সরস্বতীদেবী । চিকিৎসা করাতে না পেরে রোগযন্ত্রনায় বাড়িতেই আর্ত চিৎকার করে কাঁদতে থাকতেন সরস্বতীদেবী ।
মৃতার আত্মীয় অরুপ দাস বলেন , তাঁর জেঠিমার এই দুরাবস্থার কথা জানার পরে আন্তরিক ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রামের মুসলিম যুবক আজিজুর। অসুস্থ হিন্দু মহিলাকে সাহায্যের জন্য সে তাঁর পাতানো দিদি রুবি ঘোষ ও পুরসা গ্রাম নিবাসী লালন শেখকেও পাশে পায় । তাঁরা সবাইমিলে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস ধরে নিজেদের সাধ্যমতো অসুস্থ সরস্বতীদেবীর জন্য খাবার , পোষাক ও ওষুধ যুগিয়ে গিয়েছিলেন । এদিন সরস্বতীদেবীর মৃত্যুর পর আজিজুর ও লালন সেখ সৎকার কাজেও একই ভাবে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন । মৃতার স্বামী ভৈরব বাবু এদিন বলেন, আজিজুর ও লালন পাশে না দাঁড়ালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ সৎকার করতে পারাতনা । ওরা দুজনে সত্যি দেবতুল্য মানুষ ।
আজিজুর ও লালন এদিন বলেন , কোন তারিফ বা বাহবা কুড়ানোর জন্য নয় । নিজেদের উপলব্ধি থেকে বুঝেছি ধর্ম যার যাইহোক । আশল সতটা হল মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনেরই জন্য ।এই বাস্তব সত্যকে মান্যতা দিয়েই আমি আর লালন ওই দিনদরিদ্র হিন্দু মহিলার পাশে থেকে সন্তানের মত দায়িত্ব পালন করেছি । গ্রামবাসীরা বলেন ,সরস্বতী দাসের ছেলে নেই। আজিজুর আর লালন দুইজন ছেলের মতো তাঁর পাশে দাড়িয়েছিল । এদিন তাঁরা সরস্বতীদেবীর সৎকার কার্যের দায়িত্ব নিজেধের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলিমের সম্প্রীতির ঐক্য আজও অটুট রয়েছে ।
No comments
Post a Comment