দক্ষিণবঙ্গ

হিন্দু মহিলার মৃতদেহ কাঁধে তুলে শ্মশানে নিয়েগিয়ে সৎকার কার্য সারলেন, দুই মুসলিম যুবক

Wednesday, December 25, 2019

/ by krishaksetu Bangla



ধর্ম যার যাই  হোক ।সবথেকে বড়কথা মানুষ মানুষের জন্য , জীবন জীবনেরই জন্য।প্রভু  যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিবসের দিনে সেই বাস্তবেরই স্বাক্ষী থাকলেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির গলিগ্রামের  বাসিন্দারা ।আর্থিক  সামর্থ  না থাকায় এদিন এলাকার এক হিন্দু মহিলার মৃতদেহ সৎকারে  নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছিল পরিবার । এই কথা কানে যেতেই ত্রাতা রুপে এগিয়ে আসেন গ্রামের দুই মুসলিম যুবক আজিজুর রহমান ও লালন সেখ। হিন্দু রীতি রেওয়াজকে মান্যতা দিয়ে তাঁরাই  সরস্বতী দাসের মৃতদেহ নিজেদের কাঁধে তুলে শ্মশানে গেলেন । সৎকারের সমস্ত খরচ বহন করার পাশাপাশি এই দুই মুসলিম সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে সরস্বতীদেবীর মৃতদেহ দাহকার্য সম্পূর্ণ করালেন  । দুই মুসলিম যুবকের এই মহানুভবতার প্রশংসা করেছেন আপামোর গলসিবাসী । 

গলসির গলিগ্রামের  এক হতদরিদ্র পরিবারের বধূ ছিলেন  সরস্বতীদেবী। তাঁর প্রৌঢ় স্বামী  ভৈরব দাস একসময়ে পঞ্চায়েতের হয়ে ঢেঁড়া পেটানোর কাজ করতেন । সেই কাজ অনেকদিন আগেই বন্ধ হয়েযায়।  এরপর  থেকে কোনদিন  তিন মাঠে ঘাষ কেটে বিক্রি করেন । আরার কখনো ভিক্ষা করেন  । এই ভাবে সারাদিনে যে দশ কুড়ি টাকা  উপার্জন হয়  তাদিয়েই ওই দম্পতির   দিনগুজরান হত । মাসছয় আগে  মারণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হন সরস্বতীদেবী । চিকিৎসা করাতে না পেরে রোগযন্ত্রনায় বাড়িতেই আর্ত চিৎকার করে কাঁদতে থাকতেন সরস্বতীদেবী ।
galsi-two-Muslim-youths-carry-dead-body-of-Hindu-woman-crematorium
মৃতার আত্মীয় অরুপ দাস বলেন , তাঁর জেঠিমার এই দুরাবস্থার কথা  জানার পরে আন্তরিক ভাবে  পাশে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রামের মুসলিম যুবক আজিজুর।  অসুস্থ হিন্দু মহিলাকে সাহায্যের জন্য সে তাঁর পাতানো দিদি রুবি ঘোষ ও পুরসা গ্রাম নিবাসী  লালন শেখকেও পাশে পায় । তাঁরা সবাইমিলে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস ধরে নিজেদের  সাধ্যমতো অসুস্থ সরস্বতীদেবীর জন্য খাবার , পোষাক ও ওষুধ  যুগিয়ে গিয়েছিলেন । এদিন সরস্বতীদেবীর মৃত্যুর পর আজিজুর ও লালন সেখ সৎকার কাজেও একই ভাবে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন । মৃতার স্বামী ভৈরব বাবু এদিন বলেন, আজিজুর ও লালন পাশে না দাঁড়ালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ সৎকার করতে পারাতনা । ওরা দুজনে সত্যি দেবতুল্য মানুষ । 

আজিজুর ও লালন এদিন বলেন , কোন তারিফ বা বাহবা কুড়ানোর জন্য নয় । নিজেদের উপলব্ধি থেকে বুঝেছি ধর্ম যার যাইহোক । আশল সতটা হল মানুষ মানুষের জন্য, জীবন  জীবনেরই জন্য ।এই বাস্তব সত্যকে মান্যতা দিয়েই  আমি আর লালন ওই  দিনদরিদ্র হিন্দু মহিলার পাশে থেকে সন্তানের মত দায়িত্ব পালন করেছি ।  গ্রামবাসীরা বলেন ,সরস্বতী দাসের ছেলে নেই। আজিজুর আর লালন দুইজন ছেলের মতো তাঁর  পাশে দাড়িয়েছিল । এদিন তাঁরা সরস্বতীদেবীর সৎকার কার্যের দায়িত্ব  নিজেধের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে  ভারতবর্ষে  হিন্দু ও  মুসলিমের  সম্প্রীতির ঐক্য আজও  অটুট রয়েছে । 

No comments

Post a Comment

loading...
Don't Miss
© all rights reserved
By SDK IT SOLUTION