বর্ধমান ( প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ) :- বাবা ঋন শোধ করতে না পারায় মেয়েকে রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা দিতে অস্বীকার করার অভিযোগ উঠলো রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের কালাড়া গ্রামে। সুবিচার চেয়ে বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছে সদ্য বিয়ে হওয়া তরুণী শিউলি মালিক।ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তরুণীকে রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা দিতে অস্বীকার করায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন । এরপরেই ভোল বদলাতে বাধ্য হল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ।
কাড়ালা গ্রামে অ্যাজবেসটার্স চালার দু‘কুটুরি ঘরে বসবাস করে বিপিএল তালিকা ভুক্ত মালিক পরিবার । এই পরিবারেরই মেয়ে শিউলি মালিক । তাঁর বাবা দিলিপ মালিক ১০০ দিনের কাজ করার পাশাপাশি অপরের সামান্য জমি ভাগে নিয়ে চাষকরেন । ২০১৩ সালে কাড়ালার একটি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্ক থেকে ২০ হাজার টাকা কৃষি ঋণ নেন দিলিপ বাবু । এর কিছুদিন পরেই তিনি বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। অস্ত্রপচার হওয়ায় পর দীর্ঘদিন তিনি চিকিৎসাধীন থাকেন। দিলিপ মালিক বলেন , দুর্ঘটনায় জখম হবার পর তিনি কাজ কর্ম আর সেভাবে করতে পারতেন না ।
তারই মধ্যে ১০০ দিনের কাজ করে যে ৬ হাজার টাকার মতো পেয়েছিলেন তা ব্যাঙ্কেই জমা রয়েছে। বাকি টাকা আর শোধ করতে পারেন নি ।ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়ে দেয় চলতি বছর পর্যন্ত সুদ ও আশল বাবাদ তাঁর কাছ থেকে ব্যাঙ্কের পাওনা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা ।
পাবিবারিক এই আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৯ সালে দিলিপ মালিক নিজের মেয়ে শিউলির বিয়েদেবার বিষয়ে মনস্থির করেন । বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রায় লক্ষাধীক টাকা দেনা করে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর তিনি তাঁর মেয়ে শিউলির বিয়ে দেন । দিলিপ বাবু বলেন, বিয়ের আগে রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা পাবার জন্য তাঁর মেয়ে শিউলি সরকারী নিয়ম মেনে আবেদন করে। সেই প্রকল্পের টাকা গত ১২ ফেব্রুয়ারি কাড়ালার একই রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্কে থাকা মেয়ের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে । মেয়ে শিউলি গত শুক্রবারের পর এদিন সোমবারও ব্যাঙ্কে গিয়ে ওই টাকা তুলতে যায়। কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দেবাংশু সেন ও এক মহিলা ব্যাঙ্ক কর্মীর দুর্ব্যাবহার হজম করে খালি হাতে মেয়েকে বাড়ি ফিরতে হয় ।
শিউলি মালিক এদিন বলেন , অর্থের অভাবে গরিব পরিবারের মেয়েদের বিয়ে যাতে আটকে না যায় সেকথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রুপশ্রী প্রকল্প চালু করেন। সেই বিয়টি মাথায় রেখে তাঁর বাবার তার বিয়ে ঠিক করার পরেই সে রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা পাবার জন্য আবেদন করে । রাজ্য সরকার সেই টাকা অনুমোদনও করেছে । শিউলি বলেন , গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর নিজের অ্যাকাউন্টে রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা ঢুকেছে । বিয়েতে বাবা যে ধারদেনা করেছিল তা শোধ করার জন্য এদিনও ব্যাঙ্কে যান । টাকা তোলার জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন করেন । শিউলি জানান , ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দেবাংশু সেন ও এক মহিলা ব্যাঙ্ক কর্মী তাকে স্পষ্ট জানিয়েদেন ‘আমার বাবা কৃষি ঋণের পুরো টাকা শোধ না করলে আমাকে রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা দেওয়া হবে না । ’ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কার্যত তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয় । শিউলি বলেন, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দুর্ব্যাবহার পাবার পর একান্ত নিরুপায় হয়ে তিনি রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা পাবার জন্য ব্লকের বিডিওর কাছে সবিস্তার অভিযোগ জানিয়েছেন ।
বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন, রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা ব্যাঙ্ক আটকে রাখতে পারবে না। শিউলি মালিকের অভিযোগের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি । জেলা শাসক বিজয় ভারতি বলেন , ওই রাষ্টায়াত্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
এদিকে শিউলির অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসতেই ভল বদলায় কাড়ালার রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ । ব্যাঙ্কের সহকারি ম্যানেজার মহম্মদ শাজাহান বলেন , রুপশ্রী প্রকল্পের টাকা আটকানো হয়নি । শিউলি মালিকের বাবা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাঙ্ক লোনের টাকা শোধ করছেন না। শিউলির বাবা যাতে ব্যাঙ্ক লোন শোধ করেন তার অনুরোধ করা হয়েছে । শিউলিকে তাঁর প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেওয়া হবে । দুর্ব্যবহারের অভিযোগ সদ্য নয় বলে সহকারী ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানিয়েছেন ।
No comments
Post a Comment