সোনা গোস্বামী, মুর্শিদাবাদ:
প্রায় তিনশো বছর ধরে প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে মা দুর্গা পূজিতা হয়ে আসছেন মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান রাজবাড়িতে। কালের নিয়মে আজ রাজবাড়ির জৌলুশ হারালেও পুজোর জৌলুশ ধরে রাখতে যে আজও বদ্ধপরিকর রাজ পরিবারের সদস্যরা তা প্রমাণিত হয় রাজবাড়ির এই দুর্গা পুজোয়।
কথিত আছে- প্রায় তিনশো বছর আগে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে নৌকা বিহারে বেরিয়ে গঙ্গা পথে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে আসেন তৎকালীন জমিদার রাঘবেন্দ্র নাথ রায়।
সেসময় বন্যা প্লাবিত এই এলাকায় কাছিমের পিঠের ন্যায় এই স্থলভাগে জমিদার বাড়ির পত্তন করেন তিনি। পরবর্তীতে যা পরিচিত হয় ধুলিয়ান রাজবাড়ি নামে। এখানে সপরিবারে বসবাস শুরু করার পর প্রজাদের মঙ্গলার্থে রাজবাড়িতে শুরু করেন তিনি দুর্গতিনাশিনীর পুজো। বন্যা প্রবণ এলাকায় গঙ্গার প্রকোপ থেকে উদ্ধার পেতে গঙ্গা পুজোর মধ্য দিয়ে দুর্গা পুজোর সুচনা হয় এখানে। এছাড়াও মহালয়ার আগে কৃষ্ণনবমী থেকে শুরু হয়ে মোট তেরো দিন পুজোর প্রচলন রয়েছে এই রাজবাড়িতে। এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হ'ল প্রাচীন প্রথা মেনে আজও মোট বাইশ দেবদেবীর পুজো দেওয়া হয় এখানে দেবী দুর্গার পাশপাশি।
দিলীপ কুমার মিশ্র-(প্রধান পুরোহিত)
কর্মসূত্রে আজ রাজ পরিবারের সকল সদস্য অন্যত্র থাকলেও পুজো উপলক্ষে তারা সকলেই আসেন এই রাজবাড়িতে। রাজবাড়ির এই পুজোকে ঘিরে এলাকার সাধারণ মানুষের উন্মাদনাও লক্ষ্য করা যায় বিশেষভাবে। দেবী পুরাণত্ত্ব মতে এখানে মা দুর্গার আরাধনায় পশুবলির প্রচলন রয়েছে বরাবরই। আগে এখানে মোষ বলির প্রথা চালু থাকলেও এখন তা সম্ভবপর না হও
য় একাধিক ছাগ বলির প্রচলন আজও রয়েছে এখানে।
পুজোর দিনগুলোতে একদিকে রাজ পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি অন্যদিকে জনসাধারণের সমাগমে আজও ফুটে ওঠে সেই জমিদারি আমলের জৌলুশ। প্রাচীন প্রথা মেনে তেরো দিন পুজোর পর দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুর্গা পুজো। তবে জমিদারি নিয়ম মেনে নৌকা বাইচের মধ্য দিয়ে সবার প্রথম ধুলিয়ান রাজবাড়ির প্রতিমা বিসর্জন প্রথার প্রচলন রয়েছে আজও।
No comments
Post a Comment